তথ্যপড়াশোনা

অর্ধপরিবাহী কাকে বলে?

1 min read

অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) কী? বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার

আধুনিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্ধপরিবাহী (Semiconductor)। এটি এমন একটি পদার্থ, যার পরিবাহিতা (Conductivity) পরিবাহী (Conductor) ও অপরিবাহীর (Insulator) মধ্যে অবস্থান করে। অর্থাৎ, কিছু নির্দিষ্ট শর্তে এটি বিদ্যুৎ পরিবাহিত করতে পারে এবং কিছু শর্তে বিদ্যুৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্রানজিস্টর ও ডায়োড তৈরিতে অর্ধপরিবাহী ব্যবহৃত হয়।


অর্ধপরিবাহী কাকে বলে?

অর্ধপরিবাহী হলো এমন একধরনের পদার্থ, যার বিদ্যুৎ পরিবাহিতা পরিবাহীর চেয়ে কম কিন্তু অপরিবাহীর চেয়ে বেশি। সাধারণত সিলিকন (Si) ও জার্মেনিয়াম (Ge) এই ধরনের পদার্থের প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


অর্ধপরিবাহীর বৈশিষ্ট্য

অর্ধপরিবাহী পদার্থের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে অনন্য করে তুলেছে—

  1. পরিবাহিতা নিয়ন্ত্রণযোগ্য: এটি তাপমাত্রা বা বাহ্যিক ভোল্টেজ প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা পরিবর্তন করতে পারে।
  2. শূন্য কক্ষ তাপমাত্রায় অপরিবাহী: স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহী প্রায় অপরিবাহীর মতো আচরণ করে, তবে তাপমাত্রা বাড়লে এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
  3. ডপিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিতা বৃদ্ধি: অর্ধপরিবাহীর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অন্য মৌল যুক্ত করলে (ডপিং) এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি করা যায়।
  4. পিএন সংযোগ (PN Junction) তৈরি করা যায়: পজিটিভ ও নেগেটিভ ডপড অংশ মিলিয়ে ডায়োড, ট্রানজিস্টর ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব।

অর্ধপরিবাহীর প্রকারভেদ

অর্ধপরিবাহী মূলত দুই ধরনের হতে পারে—

১. স্বাভাবিক বা বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহী (Intrinsic Semiconductor)

  • এটি কোনো প্রকার ডপিং ছাড়া বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে।
  • যেমন: বিশুদ্ধ সিলিকন (Si) ও জার্মেনিয়াম (Ge)
  • পরিবাহিতা কম থাকে এবং শুধুমাত্র তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবাহিতা বাড়ানো যায়।

২. অপদ্রব্যযুক্ত বা ডপড অর্ধপরিবাহী (Extrinsic Semiconductor)

  • অর্ধপরিবাহীর পরিবাহিতা বৃদ্ধির জন্য এতে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ অপদ্রব্য (ডোপেন্ট) যুক্ত করা হয়।
  • এটি আবার দুই প্রকার—(ক) এন-টাইপ (N-type) অর্ধপরিবাহী:
    • এতে ফসফরাস (P), আর্সেনিক (As) ইত্যাদি যোগ করা হয়।
    • এতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন (Negative Charge Carrier) থাকে।

    (খ) পি-টাইপ (P-type) অর্ধপরিবাহী:

    • এতে বোরন (B), অ্যালুমিনিয়াম (Al) ইত্যাদি যোগ করা হয়।
    • এতে হোল (Positive Charge Carrier) বেশি থাকে।

অর্ধপরিবাহীর ব্যবহার

আজকের আধুনিক প্রযুক্তির বেশিরভাগ ডিভাইস অর্ধপরিবাহীর উপর নির্ভরশীল। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো—

  1. ট্রানজিস্টর ও মাইক্রোচিপ: কম্পিউটার প্রসেসর, মেমোরি চিপ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত হয়।
  2. ডায়োড ও LED লাইট: আলো উৎপাদনের জন্য LED (Light Emitting Diode) এবং একমুখী বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য ডায়োড তৈরি করা হয়।
  3. সোলার সেল: সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সিলিকন-ভিত্তিক সোলার প্যানেল ব্যবহৃত হয়।
  4. স্মার্টফোন ও কম্পিউটার: আধুনিক স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য গ্যাজেটের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  5. সেন্সর ও চিকিৎসা সরঞ্জাম: মেডিকেল ইমেজিং ডিভাইস, থার্মোমিটার ও অন্যান্য চিকিৎসা যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

 

অর্ধপরিবাহী পদার্থ আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে শুরু করে সৌরশক্তি উৎপাদন পর্যন্ত—সবখানেই অর্ধপরিবাহীর ব্যবহার রয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ বুঝে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির উন্নতি সম্ভব।

5/5 - (12 votes)
admin

Leave a Comment