ডাকাতির সময় এক প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (৪০) গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এসময় ডাকাতেরা ওই নারীর পুত্রবধূ বিথি খাতুনকেও গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে।
আজ শুক্রবার (২৪ মে) ভোররাতের দিকে ঝিনাইদহ সদরের খালকুলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা টের পেয়ে পুত্রবধূ বিথিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত বিথির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত বিথির লেখা চিরকুটের ভিত্তিতে সাগর সুশান্ত (৪০) ও (২৯) নামের দুজন রাজমিস্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। সুশান্ত’র বাড়ি পশ্চিম ঝিনাইদহ গ্রামে এবং সাগরের বাড়ি পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামে। আসামিরা নিহতের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করত।
জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় গেল রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল ফাতেমা বেগম। সাথে ছিল তার ছেলের বউ বিথি খাতুন। রাতের কোনও এক সময় রাস্তার পাশের ঘরের বেলকুনির গ্রিলের নিচে শাবল দিয়ে ইট কেটে, ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাতদল। এরপর ডাকাতরা ধারালো অস্ত্রের মুখে বিথি ও ফাতেমা বেগমকে জিম্মি করে ঘরে রাখা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের চেষ্টা করে।
কিন্তু তারা লুট করতে বাধা দিলে ডাকাতরা ধারালো অস্ত্র দা দিয়ে প্রথমে ফাতেমাকে খাটের উপরেই গলা কেটে হত্যা করে। এরপর বিথির গলা কেটে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে ভোরের আলো ফুটতেই আযানের সময় ঘরের দরজা ভেঙে জীবিত থাকা বিথি প্রতিবেশি ওবায়দুরের বাড়ির উঠানে পড়ে যান। এসময় বাড়ির লোকজন তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে কী হয়েছে জানতে চাইলে সে কাগজে (চিরকুটে) লিখে জানান, বাড়িতে কাজ করা রাজমিস্ত্রীরা ডাকাতির জন্য তার শাশুড়িকে হত্যা করেছে এবং তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে ঠিক কী পরিমাণ টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তা জানা যায়নি।
প্রতিবেশি ওবায়দুর জানান, আযানের পর আমি বাড়ির পাশেই ছিলাম। বিথি হঠাৎ করে এসে উঠানে পড়ে যায়। বাড়ির নারীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে ভয়ে চিৎকার করে। তখন আমি ছুটে এসে কাছে গিয়ে দেখি বিথি পড়ে আছেন। তার গলা কাটা থাকায় সে ইশারা করে কাগজ দিতে বলে।
তিনি আরও জানান, তখন বিথি কাগজে (চিরকুটে) লিখে ‘ওরা মনে করেছে আমিও মারা গেছি। কান ফুটানো। আমি চিনি ফজলু মামা’র মিস্ত্রী আমার হাত-পা বাদিল।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, দস্যুতার কারণে এবং তাদের চিনে ফেলায় এ ঘটনা ঘটায়। বিথি’র লেখা চিরকুটের তথ্যের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিজ নিজ এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দা। আটক আসামিরা স্বীকার করেছেন তারা দুজনেই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এদিকে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, বিথির গলা অনেকটাই কেটে গেছে এবং হাতেও হালকা ক্ষত আছে। তার শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সুত্রঃ ডিবিসি নিউজ