তথ্যপড়াশোনা

বিষুব রেখা কাকে বলে?

1 min read

বিষুব রেখা বা নিরক্ষরেখা কাকে বলে?

“পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষরেখা বা বিষুব রেখা।”

বিষুব রেখা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ এক ভৌগোলিক রেখা, যা আমাদের জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রকৃতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলগুলোর একটি এবং বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের অবস্থান এই রেখার আশেপাশে।

বিষুব রেখা সম্পর্কে জানা ভৌগোলিক ও আবহাওয়াবিষয়ক জ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও সহায়ক হতে পারে।


বিষুব রেখা কী?

বিষুব রেখা (Equator) হলো পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি কাল্পনিক সরলরেখা, যা উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধকে সমানভাবে বিভক্ত করে। এটি শূন্য অক্ষাংশ (0° Latitude) রেখা হিসেবে পরিচিত এবং পৃথিবীর পরিধির সবচেয়ে বিস্তৃত অংশ।

বিষুব রেখা বরাবর সূর্যের আলো প্রায় সোজাসুজি পড়ে, ফলে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা সাধারণত বেশি থাকে। এছাড়া, বিষুব রেখার আশেপাশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল, প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ আর্দ্রতা লক্ষ্য করা যায়।


বিষুব রেখার বৈশিষ্ট্য

১. অবস্থান ও দৈর্ঘ্য:

  • বিষুব রেখা পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এবং এটি পৃথিবীকে সমান দুই ভাগে (উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ) বিভক্ত করে
  • বিষুব রেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০,০৭৫ কিলোমিটার (২৪,৯০১ মাইল)
  • এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অক্ষাংশীয় রেখা।

২. দিনের দৈর্ঘ্য সমান:

  • বিষুব রেখার ওপর অবস্থিত অঞ্চলে সারা বছর দিন ও রাত প্রায় সমান (১২ ঘণ্টা করে) থাকে।
  • পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য মৌসুমি পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত হলেও বিষুব রেখায় এই পরিবর্তন খুব সামান্য।

৩. সূর্যের অবস্থান ও ঋতু পরিবর্তন:

  • প্রতি বছর দুইবার—২১ মার্চ (বসন্ত বিষুব) ও ২৩ সেপ্টেম্বর (শরৎ বিষুব)—সূর্য সরাসরি বিষুব রেখার ওপরে অবস্থান করে
  • এই দিনগুলোতে পৃথিবীর সব জায়গায় দিন ও রাত সমান হয় (Equinox)।

৪. তাপমাত্রা ও জলবায়ু:

  • বিষুবীয় অঞ্চলে সারা বছর গড় তাপমাত্রা ২৫°C থেকে ৩০°C পর্যন্ত থাকতে পারে।
  • এ অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবহুল বনাঞ্চল (Rainforest) পাওয়া যায়।
  • এখানে ঋতুগত পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম এবং গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না।

৫. বায়ুপ্রবাহ ও আবহাওয়া:

  • বিষুব রেখার আশেপাশে “আইটিসিজেড (Intertropical Convergence Zone বা ITCZ)” নামে পরিচিত নিম্নচাপ বলয় থাকে, যা প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে
  • এই অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ সাধারণত উল্লম্বভাবে ওঠানামা করে, ফলে এখানে বড় ধরনের ঝড়-ঝঞ্ঝা তুলনামূলক কম হয়।

বিষুব রেখার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও প্রভাব

১. বসন্ত বিষুব ও শরৎ বিষুব (Equinoxes):

  • ২১ মার্চ (বসন্ত বিষুব) ও ২৩ সেপ্টেম্বর (শরৎ বিষুব) দিনে সূর্য বিষুব রেখার ঠিক ওপরে অবস্থান করে।
  • এই দুই দিনে পৃথিবীর সব জায়গায় দিন ও রাত সমান হয়

২. জলবায়ুর বৈচিত্র্য:

  • বিষুব রেখার চারপাশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু (Tropical Climate) বিদ্যমান, যা উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত দ্বারা চিহ্নিত।
  • এই কারণে বিষুবীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল (Amazon Rainforest, Congo Rainforest) গড়ে উঠেছে।

৩. সমুদ্র ও বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:

  • বিষুবীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেশি থাকে, যা আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
  • এল নিনো (El Niño) ও লা নিনা (La Niña) বিষুবীয় সাগরে পানির তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়, যা বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

বিষুব রেখার উপর অবস্থিত দেশসমূহ

বিষুব রেখা মোট ১৩টি দেশ অতিক্রম করেছে। দেশগুলো হলো:

  1. ইকুয়েডর (Ecuador)
  2. কলম্বিয়া (Colombia)
  3. ব্রাজিল (Brazil)
  4. গ্যাবন (Gabon)
  5. কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (Republic of the Congo)
  6. ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (Democratic Republic of the Congo)
  7. উগান্ডা (Uganda)
  8. কেনিয়া (Kenya)
  9. সোমালিয়া (Somalia)
  10. সাও টোমে ও প্রিন্সিপে (São Tomé and Príncipe – সমুদ্রের মধ্যে পড়ে)
  11. মালদ্বীপ (Maldives – কিছু দ্বীপের কাছ দিয়ে যায়)
  12. ইন্দোনেশিয়া (Indonesia)
  13. কিরিবাতি (Kiribati – প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ)

বিষুব রেখার কিছু মজার তথ্য

  1. বিষুব রেখায় ওজন কম হয়:
    • পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের (Centrifugal Force) কারণে বিষুব রেখায় বসবাসরত ব্যক্তিদের ওজন মেরু অঞ্চলের তুলনায় সামান্য কম হয়।
  2. বিষুব রেখায় দিন ও রাত প্রায় সমান:
    • পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে মৌসুমি পরিবর্তনের কারণে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিষুব রেখার কাছে এটি প্রায় সারাবছর সমান থাকে।
  3. বিষুব রেখার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি (Rainforest) রয়েছে:
    • আমাজন রেইনফরেস্ট (ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর)কঙ্গো রেইনফরেস্ট (আফ্রিকা) বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদনকারী বনভূমি।
  4. ইকুয়েডর দেশটির নাম এসেছে “Equator” থেকে!
    • ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (Quito) বিষুব রেখার খুব কাছাকাছি অবস্থিত এবং এখানে “Mitad del Mundo” (Middle of the World) নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

পোস্ট টি উপকারে আসলে ৫ স্টার রেটিং দিবেন এবং কোন ভুল ত্রুটি থাকলে আমাকে অবগত করবেন যেন আমি সংশোধন করতে পারি।

– ধন্যবাদ

5/5 - (6 votes)
admin

Leave a Comment