Blogইসলামরমজান

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া

1 min read

রমজান মাস আমাদের ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এটি হিজরি সালের নবম মাস এবং এই মাসেই মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছে। রমজান মাস আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন, সংযম ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়।

রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক, তবে মুখে উচ্চারণ করা সুন্নত। রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম, তবে সেহরির সময়ও করা যায়।

নিচে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া লেখা হলো:

রোজার নিয়ত:

আরবি: 

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া

আরবি:

بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)

রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

১. কোরআন নাজিলের মাস

রমজান মাসের সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এই মাসেই আল্লাহ তাআলা মানুষের হেদায়েতের জন্য সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“রমজান হল সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)

২. রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে

রমজান মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)

৩. গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮)**

৪. শয়তানকে বন্দি করা হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৯)

৫. হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত – লাইলাতুল কদর

রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাতে অবস্থিত লাইলাতুল কদর (শবে কদর), যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

আল্লাহ বলেন:
“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা আল-কদর: ৩)


রমজান মাসে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল

১. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত

রমজান হলো কোরআনের মাস, তাই এ মাসে বেশি বেশি কোরআন পড়া, শোনা ও বুঝার চেষ্টা করা উচিত।

২. নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ

ফরজ নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করা উচিত।

৩. তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির

এ মাসে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশি বেশি পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

৪. বেশি বেশি দোয়া করা

রমজান মাসে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় রয়েছে, তাই নিজের জন্য, পরিবার ও উম্মাহর জন্য দোয়া করা উচিত।

৫. দান-সদকা করা

রাসুল (সা.) বলেছেন, “রমজানে দান-সদকা করা ৭০ গুণ বেশি সওয়াব অর্জন করে।” (তিরমিজি)


শেষ কথা:

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক অপার রহমতের সময়। এটি শুধুমাত্র সংযমের মাসই নয়, বরং এটি তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম সুযোগ। এই মাসে রোজা রাখা, ইবাদত-বন্দেগি করা এবং দান-সদকা করা একজন মুমিনের জন্য জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

রমজানের বরকতপূর্ণ সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত, যেন আমরা এই মাসের অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করতে পারি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন, আমিন

5/5 - (9 votes)
admin

Leave a Comment