Table of Contents
হস্তমৈথুন করলে কি রোজা ভেঙে যায়? ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
রোজা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি এবং এটি আল্লাহর নির্দেশ পালনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে রোজার সময় কিছু কাজ করলে তা ভেঙে যেতে পারে, যেমন—ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্ন আসে, হস্তমৈথুন করলে কি রোজা ভেঙে যায়? ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হস্তমৈথুনের সংজ্ঞা ও ইসলামের অবস্থান
হস্তমৈথুন (ইংরেজিতে Masturbation) বলতে বোঝানো হয় নিজের শরীর স্পর্শ বা উত্তেজিত করে বীর্যপাত ঘটানো। ইসলামে এটি হারাম (নিষিদ্ধ) কাজ হিসেবে বিবেচিত, কারণ এটি মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা নষ্ট করে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করতে পারে।
রোজা থাকা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে কি রোজা ভেঙে যাবে?
✔ হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙে যায়।
✔ হাদিস ও ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, রোজা অবস্থায় কেউ যদি হস্তমৈথুন করে এবং বীর্যপাত হয়, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে এবং ওই দিনের রোজা কাজা (পুনরায় রাখা) করতে হবে। আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে মাফ চেতে হবে!
✔ তবে এটি দ্বারা কাফফারা (অতিরিক্ত শাস্তিস্বরূপ ৬০ দিন রোজা রাখা) ওয়াজিব হয় না, কারণ এটি জৈবিক সম্পর্কের মতো কঠিন গুনাহ নয়।
ইসলামি দলিল ও ফতোয়া
- আল-কুরআন:
“আর যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তবে তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ক্ষেত্রে নয়। এতে তারা নিন্দিত হবে না।”
(সূরা আল-মুমিনুন: ৫-৬)➤ এই আয়াতে বলা হয়েছে, যৌন চাহিদা মেটানোর বৈধ উপায় হলো বৈধ স্ত্রী বা দাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। এর বাইরে কিছু করা হারাম। এই আয়াত টি উপস্থিত করেছি এটা বোঝাতে যে হস্তমৈথুন একদম হারাম। আর একটি কথা রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও নিষিদ্ধ।
বিঃদ্রঃ রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করা নিষিদ্ধ। রোজা থাকা অবস্থায় কেউ সহবাস করলে অবশ্যই রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাফফারা দিতে হবে।
- হাদিস:
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কাজ ও অজ্ঞতাসুলভ আচরণ না করে। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করে বা গালাগালি করে, তাহলে সে যেন বলে: আমি রোজাদার।” (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ১১৫১)➤ অর্থাৎ, রোজা অবস্থায় নৈতিকতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। - ইসলামিক ফিকহ:
- হানাফি ও শাফেয়ি মাযহাব: ইচ্ছাকৃত হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙে যায় এবং কাজা (পুনরায় রোজা রাখা) করতে হবে। আর অবশ্যই তওবা করতে হব।
- মালিকি ও হাম্বলি মাযহাব: হস্তমৈথুন করলে শুধু রোজা ভাঙবে না, এটি কঠিন গুনাহও হবে।
অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে কী হবে?
✔ স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না, কারণ এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত।
✔ যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন করে ফেলে (যেমন—হাত বা কাপড়ের স্পর্শে বীর্যপাত হয়) তবে রোজা ভাঙবে না, তবে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
হস্তমৈথুনের ক্ষতি ও ইসলামি পরামর্শ
হস্তমৈথুন শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, স্বাস্থ্য ও মানসিকভাবেও ক্ষতিকর। এটি ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণ নষ্ট করে এবং গুনাহের পথে ধাবিত করে। ইসলামে ধৈর্য, তাকওয়া ও বিবাহকে যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণের বৈধ পন্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
✔ পরামর্শ:
- রোজা থাকা অবস্থায় চোখ, কান ও মনকে সংযত রাখা উচিত।
- অশ্লীল কন্টেন্ট দেখা বা খারাপ চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইবাদতে সময় ব্যয় করা উচিত।
শেষ কথা:
হস্তমৈথুন করা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং রোজার সময় এটি করলে রোজা ভেঙে যাবে, যার জন্য কাজা (পুনরায় রোজা রাখা) করা ফরজ। তবে কাফফারা (৬০ দিন রোজা) বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিমদের উচিত নিজেদের সংযত রাখা, নৈতিকতা বজায় রাখা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রোজাকে যথাযথভাবে পালন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।